রাজধানীর মিরপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- গৃহকর্তা এসএম বায়েজিদ (৪৫), তার স্ত্রী কোহিনূর পারভীন অঞ্জনা (৪০) এবং তাদের ছেলে এসএম ফারহান (১৭)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৩ নম্বর সেকশনের বি-ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। গৃহকর্তা বায়েজিদ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। স্ত্রী অঞ্জনা গৃহিণী।
তাদের সন্তান ফারহান ঢাকা কমার্স কলেজের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তিনটি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মা অঞ্জনা ও ছেলে ফারহানের লাশ খাটে শোয়া অবস্থায় ছিল। আর বায়েজিদের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, গৃহকর্তা বায়েজিদ ও তার স্ত্রী অঞ্জনা প্রথমে তাদের সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেন।
পরে তারাও বিষপান করেন। বিষপানের পর অঞ্জনার মৃত্যু হলেও বায়েজিদ বেঁচে ছিলেন। পরে তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। বায়েজিদ এক সময় গার্মেন্ট ব্যবসা করতেন। ৫ বছর আগে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে গার্মেন্ট ব্যবসা গুটিয়ে নেন।
ব্যবসা করতে গিয়ে আত্মীয়স্বজন এবং ব্যাংক থেকে বড় অংকের টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এ কারণে হয়তো বায়েজিদ এবং তার স্ত্রী অঞ্জনা পরিকল্পনা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, বুধবার রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর্যন্ত যে কোনো সময় এ ঘটনাটি ঘটে। ওই বাসা থেকে অসংখ্য চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি চিরকুটে বায়েজিদ লিখেছেন, ‘লাস্ট গার্মেন্ট ব্যবসায় অনেক বড় একটা লস করলাম। আমার ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আমাকে কাজ বা টাকা দিয়ে সহযোগিতা করলেন না। এ লজ্জা নিয়ে যাচ্ছি। হয়তো অন্য কোথাও দেখা হবে। সেখানে এ দূরত্ব বা বৈষম্য থাকবে না।’ আরও কয়েকটি চিরকুটে তিনি লিখেছেন, ‘উই আর ভেরি সরি। পরিস্থিতির চাপে আমরা এ ধরনের এ ঘটনা ঘটিয়েছি।’
পুলিশের মিরপুর জোনের এসি খায়রুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ‘একজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অন্য দু’জনের লাশ বিছানায় পাওয়া যায়। তাদের মুখে সাদা তরল জাতীয় পদার্থ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিষ প্রয়োগের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হলে ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘরে অসংখ্য চিরকুট পাওয়া গেছে। এগুলো দেখে বোঝা যায় বায়েজিদ হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তার কাছে অনেক মানুষ টাকা পেতেন। পাওনাদাররা প্রায়ই তার কাছে টাকা চাইতে আসতেন। এসব চাপ সহ্য করতে না পেরে তারা হয়তো এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
কাফরুল থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে লাশ তিনটি উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্রাইম সিন এসে আলামত সংগ্রহ করে। সন্ধ্যায় লাশ তিনটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
অঞ্জনার ভগ্নিপতি মুরাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে বায়েজিদ বাসায় আসেন। তারপর বাসাটি ভেতর থেকে লাগানো ছিল। দুপুর পর্যন্ত বাসার দরজা খোলেননি। দুপুরে দরজা নক করলে ভেতর থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, অঞ্জনা ও তার ছেলে ফারহান মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। অঞ্জনার স্বামী বায়েজিদ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন। পরে পুলিশকে খবর দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বাড়িটি বায়েজিদের শ্বশুরের। বায়েজিদ দীর্ঘদিন ধরে এ বাসায় বসবাস করছেন। বাড়ি দেখাশোনা করেন অঞ্জনার বড়ভাই হাফিজুর রহমান। এখানে থেকেই মিরপুরে গার্মেন্ট ব্যবসা করতেন বায়েজিদ। ব্যবসা করতে গিয়ে আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। ব্যাংক থেকেও মোটা অঙ্কের ঋণ নেন। তবে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হয় তার। তিনি নিঃস্ব হয়ে যান। ঋণের চাপের কারণেই হয়তো তারা আত্মহত্যা করেছেন।’
সূত্র:যুগান্তর
Leave a Reply